প্রতিদিন ১টি আমলকীর ২০ উপকারিতা
আমলকি এক প্রকার ভেষজ ফল। সংস্কৃত ভাষায় এর নাম - আমালিকা। ইংরেজি নাম -aamla বা Indian gooseberry। আমলকি গাছের বৈজ্ঞানিক নাম Phyllanthus emblica বা Emblica officinalis। এর স্বাদ প্রথমে কষাটে লাগলেও খাওয়া শেষে মুখে মিষ্টি ভাব আসে। আমলকির অনেক ভেষজ গুণ রয়েছে। প্রতিদিন একটি আমলকি খাওয়ার অভ্যেস করুন।আমলকিতে প্রচুর ভিটামিন সি থাকে। পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে, আমলকিতে পেয়ারা ও কাগজি লেবুর চেয়ে ৩ গুণ ও ১০ গুণ বেশি ভিটামিন সি রয়েছে। আমলকিতে কমলার চেয়ে ১৫ থেকে ২০ গুণ বেশি, আপেলের চেয়ে ১২০ গুণ বেশি, আমের চেয়ে ২৪ গুণ এবং কলার চেয়ে ৬০ গুণ বেশি ভিটামিন সি রয়েছে।
প্রতিদিন এক গাদা ভিটামিন ট্যাবলেট না খেয়ে খান একটি করে আমলকী। কিংবা আমলকীর আচার। খেতে পারেন আমলকীর মোরব্বা কিংবা আমলকীর পাউডার ব্যবহার করতে পারেন রান্নায়। এই সামান্য আমলকী আপনার দেহের করবে বিস্ময়কর সব উপহার। কীভাবে জানতে চান? আসুন জানি প্রতিদিন একটি আমলকী খাওয়ার ২০টি উপকারিতা সম্পর্কে।
-আমলকী চুলের টনিক হিসেবে কাজ করে এবং চুলের পরিচর্যার ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি কেবল চুলের গোড়া মজবুত করে তা নয়, এটি চুলের বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে।
-এটি চুলের খুসকির সমস্যা দূর করে ও পাকা চুল প্রতিরোধ করে।
-আমলকীর রস কোষ্ঠকাঠিন্য ও পাইলসের সমস্যা দূর করতে পারে। এছাড়াও এটি পেটের গোলযোগ ও বদহজম রুখতে সাহায্য করে।
-এক গ্লাস দুধ বা পানির মধ্যে আমলকী গুঁড়ো ও সামান্য চিনি মিশিয়ে দিনে দু’বার খেতে পারেন। এ্যাসিডেটের সমস্যা কম রাখতে সাহায্য করবে।
-আধা চূর্ণ শুষ্ক ফল এক গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে খেলে হজম সমস্যা কেটে যাবে। খাবারের সঙ্গে আমলকীর আচার হজমে সাহায্য করে।
-প্রতিদিন সকালে আমলকীর রসের সঙ্গে মধু মিশে খাওয়া যেতে পারে। এতে ত্বকের কালো দাগ দূর হবে ও ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়বে।
-আমলকীর রস দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। এছড়াও চোখের বিভিন্ন সমস্যা যেমন চোখের প্রদাহ। চোখ চুলকানি বা পানি পড়ার সমস্যা থেকে রেহাই দেয়।
-আমলকী চোখ ভাল রাখার জন্য উপকারী। এতে রয়েছে ফাইটো-কেমিক্যাল যা চোখের সঙ্গে জড়িও ডিজেনারেশন প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
-এছাড়াও প্রতিদিন আমলকির রস খেলে নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ দূর হয় এবং দাঁত শক্ত থাকে।
-আমলকীর টক ও তেতো মুখে রুচি ও স্বাদ বাড়ায়। রুচি বৃদ্ধি ও খিদে বাড়ানোর জন্য আমলকী গুঁড়োর সঙ্গে সামান্য মধু ও মাখন মিশিয়ে খাওয়ার আগে খেতে পারেন।
-রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং মানসিক চাপ কমায়।
-কফ, বমি, অনিদ্রা, ব্যথা-বেদনায় আমলকী অনেক উপকারী।
-ব্রঙ্কাইটিস ও এ্যাজমার জন্য আমলকীর জুস উপকারী।
-শরীর ঠাণ্ডা রাখে, শরীরের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে, পেশী মজবুত করে।
-এটি হৃদযন্ত্র, ফুসফুসকে শক্তিশালী করে ও মস্তিষ্কের শক্তিবর্ধন করে। আমলকীর আচার বা মোরব্বা মস্তিষ্ক ও হৃদযন্ত্রের দুর্বলতা দূর করে।
-শরীরের অপ্রয়োজনীয় ফ্যাট ঝরাতে সাহায্য করে।
-লোহিত রক্তকণিকার সংখ্যা বাড়িয়ে তুলে দাঁত ও নখ ভাল রাখে।
-এর এ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান ফ্রি র্যাডিকালস প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। বুড়িয়ে যাওয়া ও সেল ডিজেনারেশনের অন্যতম কারণ এই ফ্রি র্যাডিকালস।
-সর্দি-কাশি, পেটের পীড়া ও রক্তশূন্যতা দূরীকরণে বেশ ভালো কাজ করে।
-ব্লাড সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে রেখে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। কোলেস্টেরল লেভেলেও কম রাখাতে যথেষ্ট সাহায্য করে।
আমলকির যেমন রয়েছে গুণ তেমনি রয়েছে কিছু অপকারিতা!
ঔষধি গুণসম্পন্ন ছোট ফল আমলকি ভিটামিন সি এর গুরুত্বপূর্ণ উৎস। এছাড়া ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য তো আমলকিকে মনে করা হয় মহৌষধ। এতো গুণসম্পন্ন আমলকি যে আপনার স্বাস্থ্যের জন্য একেবারেই ক্ষতিকর নয়, এমনটা মনে করার কোন কারণ নেই। আমলকি খেলেও শরীরে দেখা দিতে পারে বেশ কিছু সমস্যা।* হজমে গ-গোলঃ
অনেক সময় হজমে সমস্যা সৃষ্টি করে আমলকি। যদি শরীরে পানিশূন্যতা সৃষ্টি হয়, সেক্ষেত্রে আমলকি খেলে এটি হজমের সমস্যা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়।
* অ্যাসিডিটি বাড়িয়ে দেয়ঃ
আমলকি হচ্ছে অ্যাসিডিক প্রকৃতির ভিটামিন সি-র গুরুত্বপূর্ণ উৎস। সাধারনত বেশি উপকার পেতে খালিপেটে আমলকি খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। তবে এটি অনেক ক্ষেত্রে হিতে বিপরীত হতে পারে। অর্থাৎ খালিপেটে আমলকি অ্যাসিটিডি বাড়িয়ে দিয়ে শরীরে সমস্যা সৃষ্টি করে। যদি অতিরিক্ত অ্যাসিডিটির সমস্যা থাকে, তাহলে এটি এড়িয়ে চলাই ভালো।
* ডায়াবেটিস রোগীরা সতর্কতার সঙ্গে আমলকি নিনঃ
আমলকিকে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ঔষধ হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে এটি ডায়াবেটিসের ঔষধের কার্যকারিতায় বাধা সৃষ্টি করে। এটি রক্তে শর্করার পরিমাণ কমিয়ে দেয়, যা অনেক সময় রোগীর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। সেজন্য যারা ডায়াবেটিসের ঔষধ সেবন করেন তাদের চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েই আমলকি গ্রহণ করা উচিত।
* জ্বর-ঠান্ডায় আমলকিঃ
জ্বর এবং ঠান্ডা সারাতে আমলকির জুড়ি নেই। এটি খুব দ্রুত শরীরের তাপমাত্রায় কমাতে সাহায্য করে। অনেক ক্ষেত্রে এটি উপকারের চেয়ে অপকারের কারণ বেশি হয়।
আমলকির উপকারিতা
ReplyDeleteপালং শাকের উপকারিতা ও অপকারিতা