নিয়মিত চোখের যত্ন

নিয়মিত চোখের যত্ন 

মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত সুন্দর রাখতে আমাদের চেষ্টা যেন শেষ নেই। পার্লার থেকে জিমে যাওয়া কোন কিছুই বাদ রাখি না। অথচ একটি বারও ভাবি না সুনয়না চোখের কথা। কিন্তু যখন সাজতে বসি প্রথমেই মাথায় আসে চোখ দুটিকে কী ভাবে সাজাবো। তখন আর কিছু পরোয়া করি না। তাই চোখ বাবাজিও মাঝে মাঝে বিগড়ে বসে! এ জন্যই নিয়মিত চোখের যত্ন নেয়া দরকার। আজ তার কথাই বল‌ি….
প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে চোখে ঠাণ্ডা পানির ঝাপটা দিন। চোখে পানির ঝাপটা দেওয়ার সব থেকে ভালো পদ্ধতি হল, মুখ ভর্তি পানি নিয়ে নিন। মুখে পানি নেওয়া অবস্থাতেই চোখে ঠাণ্ডা পানির ঝাপটা দিন। কিছুক্ষণের জন্য সবুজ গাছের দিকে তাকিয়ে থাকুন।
চোখের সুস্থতার জন্য চোখের কিছু ব্যায়াম:
১। ক্লকওয়াইজ ও এন্টি ক্লকওয়াইজ চোখের মণি ঘুরিয়ে চোখের ব্যায়াম করুন। ১০ সেকেন্ড করে করুন। এতে চোখের ক্লান্তি দূর হবে; চোখের পেশিও শক্তিশালী হবে।
২। চোখের পেশির রক্ত সরবরাহ সচল রাখাতে দুই হাতের তালু কয়েক মিনিট ঘষে আলতোভাবে হাতের তালু দিয়ে আলাদা করে চোখ বন্ধ রাখুন পাঁচ সেকেন্ড। ধীরে ধীরে নিঃশ্বাস নিতে থাকুন। এতে চোখের বিশ্রামও হবে।
৩। এক হাত দূরে একটি কলম নিয়ে সোজা কলমটির দিকে তাকিয়ে থাকুন। তারপর ধীরে ধীরে কলমটিকে কাছাকাছি নিয়ে আসেন, যতক্ষণ পর্যন্ত না কলমটিকে ঘোলাটে দেখা যায়। এরপর আবারও কলমটিকে ধীরে ধীরে কাছে থেকে দূরে নিয়ে যান। খেয়াল রাখুন, চোখের দৃষ্টি যেন কলমের দিকে থাকে।
৪। ঘরের এক কোনায় বসে ঘরের সব ছোটখাট বস্তু গুলোর (দরজা , লাইট, ফার্নিচার, ঘড়ি) দিকে হালকাভাবে একটার পর একটাতে দৃষ্টি বুলাতে থাকুন। এটি চোখের ফ্লেক্সিবিলিটি বাড়াতে সহায়তা করে।
৫। রাতে ঘুমানোর সময় বিছানায় শুয়ে এই ব্যায়ামটি করবেন। চোখ বন্ধ করে চোখের পাতা আঙুলের ডগা দিয়ে হালকা করে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ম্যাসাজ করুন। ভ্রুর নিচের দিকটা এবং চোখের নিচের দিক এভাবে ২ মিনিট ম্যাসাজ করে নিন।
চোখের সুস্থতার জন্য খাদ্যতালিকায় যা যা রাখতে পারেন-
১। বিভিন্ন শাক-সবজি:
শাক-সবজিতে ভিটামিন সি, বিটা ক্যারোটিন, প্রচুর পরিমাণে লুটেইন এবং জিয়াক্সানথিন আছে। এছাড়া প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন রয়েছে যেটি ক্ষতিকারক নীল আলোর তীব্রতা ৪০-৯০ শতাংশ কমিয়ে ফেলে। এর ফলে সূর্য থেকে আসা সূর্যের অতি বেগুনী রশ্মি থেকে চোখকে বাঁচায়। তাই এই শাক-সবজি আপনি আপনার প্রতিদিনের খাবার মেন্যুতে রাখতে পারেন।
২। গাজর:
বিটা ক্যারোটিন এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্টে ভরপুর গাজর চোখের ম্যাকুলার কমে যাওয়া এবং ছানি পড়া প্রতিরোধ করে। গাজর খেলে চোখে কম দেখা সংক্রান্ত কোনো জটিলতা দূর হয়ে যায়। এই সবজিটি আপনি সালাদের সাথে বা বিভিন্ন সবজির সাথে রান্না করে খেতে পারেন। তবে কাঁচা খেলে বেশি উপকার পাওয়া যাবে।
৩। ডিম:
গবেষকদের মতে, ডিমের কুসুমে প্রচুর পরিমাণে লুটেইন, জিয়াক্সানথিন এবং জিংক আছে যেগুলো চোখের ম্যাকুলার পতন রোধে সাহায্য করে থাকে। এজন্য প্রতিদিন অন্তত একটি করে ডিম খেতে পারেন।
৪। কাজুবাদাম:
গবেষকরা বলেন কাজুবাদামে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই আছে যেটি চোখের ম্যাকুলার পতন অনেকটা কমিয়ে ফেলতে পারে। একমুঠো কাজুবাদাম প্রতিদিন আপনার প্রয়োজনীয় ভিটামিন ই এর অর্ধেক অংশ পূরণ করে থাকে।
৫। মিষ্টি আলু:
গবেষণাতে দেখা গেছে যে মিষ্টি আলুতে প্রচুর পরিমাণে বিটা ক্যারোটিন রয়েছে যা চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে এবং রাতের আলোতে চোখের দৃষ্টি ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে।
যে সমস্ত খাবারে ভিটামিন-এ, ভিটামিন-সি এবং ভিটামিন-ই র মতো গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে সে সমস্ত খাদ্যে রোজকার খাবারে রাখার চেষ্টা করুন। তাছাড়া ডি যুক্ত খাবার খাওয়া প্রয়োজন। গাজর, বিট, পেঁপে ইত্যাদি পুষ্টিকর শাক-সবজি ও ফল খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।
এছাড়াও,
-আলু কিংবা শসার টুকরো চোখের ওপর দিয়ে ১০ মিনিট চোখ বন্ধ করে বিশ্রাম নিন। ক্লান্তি কাটবে। চোখের তলায় কালি থাকলে দূর হবে।
-মুলতানি মাটি ও কয়েক ফোঁটা লেবুর রস দইয়ের সাথে মিশিয়ে চোখের নিচে লাগালে উপকার পাবেন।
-তুলসি পাতাবাটা ও চন্দনবাটা গোলাপ জল দিয়ে মিশিয়ে চোখে লাগান।
-ঠান্ডা টি-ব্যাগ চোখের পক্ষে আরামদায়ক।
-পুদিনা পাতার রস চোখর কালো দাগ দূর করতে সাহায্য করে। পুদিনা পাতার রস তুলাতে করে চোখের যে অংশে কালো দাগ আছে সেখানে লাগান। সাবধান থাকবেন যেন কোনভাবেই এই রস চোখের ভেতরে প্রবেশ না করে।
-ঘুমাতে যাওয়ার আগে চোখ বন্ধ করে চারপাশে বাদামের তেল দিয়ে ম্যাসেজ করুন। এটা কালো দাগ তুলতে খুব ভালো কাজ করে। এছাড়া চোখের চামড়া কুঁচকানোও দূর করে।
-চোখের মেক-আপের জন্য সব সময় খুব ভালো ব্র্যান্ড বা প্রোডাক্ট ব্যবহার করুন। এক্ষেত্রে দামের সঙ্গে একটু কম্প্রমাইজ করে নিন। দিনের বেলাতে চোখে খুব একটা চড়া মেক-আপ না করাই ভালো। সান প্রটেক্ট মেক-আপ প্রোডাক্টই দিনে ব্যবহার করুন। রাতে ঘুমানোর আগে মেক-আপ অবশ্যই খুব ভালো করে তুলে নিয়ে তবেই শুতে যাবেন। চোখের মেক-আপ তুলতে অলিভ তেল বা আমন্ড তেল ব্যবহার করুন। এক্ষেত্রে কোন অলসতা নয়। আন্ডার আই ক্রিম ব্যবহার করুন বিশেষজ্ঞের মতামত নিয়ে।
-সূর্যের আলোতে অনেকেরই চোখ জ্বালা করে, চোখে পানি আসে , চোখ কুঁচকে তাকাতে হয়, এটা চোখের জন্যে ক্ষতিকর। তাই দিনের বেলা বাইরে বেরনোর সময় সূর্যের আলো থেকে চোখকে বাঁচাতে সানগ্লাস ও ছাতা ব্যবহার করুন।
-ঘুম চোখকে পরিপূর্ণ বিশ্রাম ও পুনর্দৃষ্টির জন্য শক্তি দেয়। অপর্যাপ্ত ঘুম দৃষ্টিশক্তির ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। চোখের সুরক্ষার জন্য প্রতিদিন আট ঘণ্টা ঘুমানো উচিত।
-রোজ সকালে ১০ মিনিট চোখের ব্যায়াম করুন। চেষ্টা করুন দুশ্চিন্তা থেকে বিরত থাকার।
-যখন তখন চোখে হাত দিবেন না। অযথা চোখ ঘষবেন না। হাতের ময়লা থেকে ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাছাড়া ঘষাঘষিতে চোখের নরম ত্বকে বলিরেখা পড়ে।
-দৃষ্টিশক্তি ঠিক রাখার জন্যে ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ খাবার খান।
-প্রতিদিন অন্তত ৮/১০ গ্লাস পানি পান করুন।
– নিয়মিত কম করে হলেও ৮ ঘণ্টা ঘুমান।
-বেশি বেশি সবুজ শাক-সবজি খান। খাবারের পাশাপাশি সালাদ খাবেন।
-বাইরে থেকে ফিরে চোখে পরিষ্কার পানি দিয়ে ঝাপটা দিন।
-ধূমপান থেকে বিরত থাকুন। আমরা যাই করিনা কেন যদি নিয়মিত করতে পারি তবে তার ফল আমরা অবশ্যই পাব।
Share:

No comments:

Post a Comment

Popular Posts

Blog Archive

Powered by Blogger.

Blog Archive

Unordered List

  • Lorem ipsum dolor sit amet, consectetuer adipiscing elit.
  • Aliquam tincidunt mauris eu risus.
  • Vestibulum auctor dapibus neque.

Theme Support

Need our help to upload or customize this blogger template? Contact me with details about the theme customization you need.