সর্পগন্ধা এর গুন

সর্পগন্ধা এর গুন

সর্পগন্ধা

নামঃ সর্পগন্ধা (সর্প-গন্ধা এখানে গন্ধা হিংসা বা নিধন অর্থে বুঝানো হয়েছে অর্থাৎ সাপের বিষ দমেন একটি কার্যকরী গাছ বলে এর নাম সর্পগন্ধা) এছাড়া সর্পাদনী ও সর্পক্ষী না্মে ও ডাকা হয়।

রাসায়নিক উপাদান: সর্পগন্ধা মূলে ইনডোল এলকালয়েড রেয়েছে যাতে রিসারপিন, ডিসারপিন, রেসিনামিন থাকে। অন্যান্যের মধ্যে আজমলীন, আজমালিসিন, সাপেন্টাইন , অলিরোসিন ও আনস্যারচুরেটিড এলকোহল ইত্যাদি রয়েছে।
পরিচিতি:
এটি একটি গল্মজাতীয় গাছ । এই গল্মটির পাতা ছোট ছোট লম্বা ও পাতার ডগা সরু । ফুল প্রথম অবস্হায় সবুজ রঙের হলেও পাকালে বেগুনী কালো রঙের হয় । মূলের রং ধূসর ও গন্ধ কাঁচা তেঁতুলের মত সারা বছরই গাছে ফুল ফোটে ও ফল ধরে ।সর্ব উচ্চ ৪ ফুট লম্বা হয়। দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় দেশেই সর্পগন্ধা সহজলভ্য। আমাদের দেশে বিভিন্ন বাগান ছাড়াও দিনাজপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট ও চট্টগ্রামে বিক্ষিপ্তভাবে চোখে পড়ে। এ গাছ চমৎকার ঔষধি গুণসম্পন্ন। বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে সর্পগন্ধা বেশ উপকারী উদ্ভিদ। দীর্ঘদিন ধরে আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে সর্পগন্ধার অবস্থান পাকাপোক্ত। শুধু ভেষজ চিকিৎসায়ই নয়, হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায়ও এর উপযোগিতা রয়েছে।
চাষ পদ্ধতি
মাটি ও আবহাওয়া:বেলে দোঁয়াস বা দোঁয়াস মাটিতে সর্পগন্ধা ভাল জন্মায়। গরম ও আদ্র জলবায়ু এই বনৌষধিটি পছন্দ করে।
চারা তৈরী :চারা বীজ থেকে বা সেকড়ের টুকরো থেকে তৈরী করা যায় । বর্ষার শুরুতে বীজতলায় বা পলিথিন প্যাকেটে চারা তৈরী করা যায় । মূল শেকড় বা শাখাশেকড়ের টুকরো দু ইঞ্চি গভীরে লম্বালম্বি নালীতে লাগান হয় । চারা লাগানোর প্রায় কুড়ি দিন পর নিড়েন দিতে হবে । প্রয়োজন গাছের পাতা বা ডাল ছেঁটে দিতে হবে । এতে শেকড়ের বৃদ্ধি ভাল হবে ।
পরিচর্যা : গাছ বড় হলে মাটির রস কমে গেলে মাঝে মাঝে সেচ দিতে হবে । নিড়ানির সাহায্যে আগাদা দমন ও মাটি ঝুর ঝুরে করে দিতে হবে ।
ফসল তোলা: ডিসেম্বর – জানুয়ারী মাসে মাটি খুঁড়ে শেকড় তোলা হয় । শেকড়গুলি জমে ভালভাবে ধুয়ে রৌদ্রে শুকিয়ে নিয়ে তারপর ব্যবহার করতে হবে ।
উপকারিতা
গাছের মূল নানা প্রকার রোগের চিকিত্সায় লাগে ।
>>সর্পগন্ধা এর মূলকে চুর্ণ করে অল্প পরিমান খেলে উওজনা(পাগলাটে ভাব দুর হয়) ও ঘুম ভাল হয় ।স্নায়বিক উত্তেজনা কমাতে প্রতিদিন দুবেলা ২৫০ মিলিলিটার ছাগলের দুধের সঙ্গে ১ গ্রাম সর্পগন্ধার শিকড় বাটা ও চিনি মিশিয়ে খেতে পারেন।যাঁদের ঘুমের সমস্যা রয়েছে তাঁরা রাতে ঘুমানোর আগে ০.২৫ গ্রাম শিকড়ের গুঁড়া খেতে পারেন।আর যাঁরা ঘুমের ক্ষেত্রে খুব সংবেদনশীল তাঁরা সকালে ও রাতে দুবার খেতে পারেন।
>>দৈহিক দূবর্লতা ও মানসিক অবসাদ জনিত রোগেও মূলের চুর্ণ ব্যবহৃত হয় ।
>> সর্পগন্ধা থেকে পাওয়া রেসার পিন উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।(যা বেশী পাওয়া যায় শিকরের ছালে)
 >> সর্পগন্ধা  পাতার নির্যাস চোখের ছানি কাটাতে সাহায্য করে।
>> বিভিন্ন সরীসৃপ বা পোকামাকড় কামড়ালে প্রতিষেধক হিসেবে সর্পগন্ধা ব্যবহার করা হয়।কথিত আছে যে বেজি সাপের সাথে যুদ্ধ করার আগে সর্পগন্ধা গাছের মূল ও পাতা চিবিয়ে খেয়ে থাকে, যাতে বিষক্রিয়া থেকে রক্ষা পায়।
>> জ্বর, ঠাণ্ডা-কাশি প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
>> মানসিক বিকারগ্রস্ততা, হিস্টেরিয়া রোগ উপশমে ব্যবহার হয়।দুধের সাথে শিকড় চূর্ণ মিশিয়ে দিনে তিনবার সেবন করলে হিস্টিরিয়া রোগীও সুস্থ হয়ে যাবে। ছাগলের দুধের সাথে (২৫০ মিলি) ১ গ্রাম শিকড় চূর্ণ মিশিয়ে খেলে পাগলামি নিরাময় হয়।
>> পায়ের পাতা ও আঙ্গুলে এই উদ্ভিদের মূল ও পাতার নির্যাসের প্রলেপ দিয়ে নিত, যাতে ক্ষতিকারক প্রাণী ও কীটপতঙ্গ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। মসার কামর থেকে বাচতে ব্যবহার করে দেখতে পারেন তবে পরিক্ষিত নয়।
>> বিভিন্ন প্রকার চর্মরোগ নিরাময়েও এর ঔষধ কার্যকর।
>> বার্ধক্যজনিত রোগও এটি দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে। এই গাছে স্টেরল, অসম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড, অলিক এসিড, ফিউমারিক এসিড, গ্লুকোজ, রেজিন, খনিজ লবণ, স্টার্চ ইত্যাদি পাওয়া গেছে।
সর্পগন্ধা গাছটি বর্তমানে বিলুপ্তির পথে। এখনই এর সংরক্ষন না করলে তা পাওয়া খুবই কঠিন হয়ে পড়বে বলে কেও কেও মনে করে।
Share:

No comments:

Post a Comment

Popular Posts

Blog Archive

Powered by Blogger.

Blog Archive

Unordered List

  • Lorem ipsum dolor sit amet, consectetuer adipiscing elit.
  • Aliquam tincidunt mauris eu risus.
  • Vestibulum auctor dapibus neque.

Theme Support

Need our help to upload or customize this blogger template? Contact me with details about the theme customization you need.