যষ্টিমধুর উপকারিতা

যষ্টিমধুর অজানা তথ্য- ভেষজ গুণাবলী ও উপকারিতা

যষ্টিমধু  বহুবর্ষজীবী গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ । যষ্টিমধু এর ইংরেজি নাম Licorice । যষ্টিমধুর মূল বেশ মোটা, গোলাকার ও মিষ্টি স্বাদ যুক্ত । মধ্যপ্রাচ্য ও পাকিস্তানে প্রচুর পরিমাণে যষ্টিমধু জন্মে থাকে ।

যষ্টিমধুর  যে অংশ ব্যবহার করা হয়
যষ্টিমধুর ব্যবহার্য অংশ হল এর মূল ।

যষ্টিমধুর  ব্যবহারবিধি ও উপকারিতা 
বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় যষ্টিমধু ব্যবহারের ঐতিহ্য অনেক পুরাতন। নিম্নে এর উপকারিতাগুলো দেয়া হলো-

আলসার প্রতিরোধে যষ্টিমধুর  ব্যবহার
যষ্টিমধুতে রয়েছে আলসার প্রতিরোধী এবং পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ামুক্ত বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান । তাই ইহা এসপিরিন জাতীয় ঔষধের প্রভাবে সৃষ্ট আলসারসহ সকল প্রকার আলসার প্রতিরোধ ও নিরাময়ে কার্যকর । যষ্টিমধু গ্যাষ্ট্রিক মিউকোসা হতে মিউকাস রসসহ আলসার প্রতিরোধী অন্যান্য রসের নিঃসরণ বাড়ানোর মাধ্যমে আলসার প্রতিহত করে ।

যকৃত সুরক্ষায় যষ্টিমধুর  ব্যবহার
গবেষণায় যষ্টিমধুতে যকৃত প্রতিরক্ষাকারী গুণের প্রমাণ পাওয়া যায় । গবেষণা হতে জানা যায় যে, যষ্টিমধু এসপারটেট এমিনো ট্রান্সফারেজ (AST), এলানিন এমনো ট্রান্সফারেজ (ALT), ল্যাকটেট ডিহাইড্রোজেনেজ (LDH) এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখে এবং আমাদের লিভার বা যকৃত সুস্থ রাখতে সাহায্য করে । শুধু তাই নয় ইহা আমাদের লিভার বা যকৃত কার্বন-টেট্রা-ক্লোরাইড(CCl4) ক্যাডমিয়াম (Cd) সহ অন্যান্য বিষাক্ততা থেকে রক্ষা করে ।

মৃগী রোগে যষ্টিমধুর  ব্যবহার
এ রোগের ক্ষেত্রে যষ্টিমধু চূর্ণ এক বা দুই গ্রাম মাত্রায় নিয়ে আধাকাপ পরিমাণ পাকা চালকুমড়ায় রসের সাথে মিশিয়ে প্রতিদিন খেতে হবে । এর ফলে ঐ রোগাক্রমন বৃদ্ধি পাবে না, আর দীর্ঘদিন ব্যবহার করতে পারলে, এ রোগ থেকে রেহাইও পাওয়া যেতে  পারে ।

শ্বাসনালীর প্রসারণ ও কফ নিঃসরণে যষ্টিমধুর  ব্যবহার
যষ্টিমধুতে বিদ্যমান গ্লিসাইরিজিন শ্বাসনালী প্রসারিত করে এবং ভিতরে জমে থাকা কফ্ নরম করে বের করে দেয় । ইহা ফুসফুসের ব্রঙ্কিয়াল পেশীর সংকোচন প্রতিহত করে । তাই ইহা কন্ঠস্বরের কর্কশভাব দূর করে এবং যেসব ভাইরাস শ্বসনতন্ত্রের রোগ সৃষ্টি ও অতিরিক্ত শ্লেষ্মা তৈরি করে তাঁদের বিরুদ্ধে কাজ করে । সাম্প্রতিক সময়ের গবেষণা হতে জানা যায় যে, ইহা সার্স (SARS) রোগ প্রতিরোধেও কার্যকর ভূমিকা পালন করে ।

ভাইরাস প্রতিরোধে যষ্টিমধুর  ব্যবহার
যষ্টিমধুতে বিদ্যমান গ্লিসাইরিজিন ভাইরাসের বৃদ্ধি রোধ এবং T- লিম্ফোসাইট ও NK কোষের কার্যকারীতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধ করে । এ প্রক্রিয়ায় যষ্টিমধু আমাদের ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস ও হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের হাত হতে রক্ষা করে ।

বায়ু জনিত পেট ব্যথায় যষ্টিমধুর  ব্যবহার
যাদের পেটে বায়ুজনিত ব্যথা হয়, সেক্ষেত্রে যষ্টিমধু চূর্ণ দেড়গ্রাম মাত্রায় দুই বেলা খাওয়ার আগে পানিসহ খেতে হবে । ৩-৪ দিন খাওয়ার ফলে বায়ুজনিত ব্যথার  উপশম হবে।

অপুষ্টিজনিত কৃশতায় যষ্টিমধুর  ব্যবহার
পুষ্টিহীনতা বা শরীরের বিপাক জনিত সমস্যার ফলে যারা কৃশতায় ভুগছেন, তাঁরা প্রতিদিন অল্প পরিমাণ যষ্টিমধু সেবন করলে উপকার পাবেন ।

যৌন অতৃপ্তিতে যষ্টিমধুর  ব্যবহার
যারা পরিপূর্ণ যৌনতৃপ্তি পাচ্ছেনা, তাঁদের যষ্টিমধু চূর্ণ এক গ্রাম মাত্রায় দুধের সঙ্গে মিশিয়ে সকালে বিকালে দু´বার করে ২-৩ সপ্তাহ ধরে খেলে উপকার পাবেন।

জন্ডিসে যষ্টিমধুর  ব্যবহার
যারা জন্ডিসে আক্রান্ত বা পূর্বে জন্ডিসে আক্রান্ত হয়েছিল তাঁদের ডিম, ঝাল ও তেল জাতীয় খাবার বর্জন করতে হবে । আর যষ্টিমধু চূর্ণ করে এক গ্রাম মাত্রায় আধাকাপ গরম দুধসহ প্রতিদিন সকাল ও বিকালে ২ বার করে  ৫-৬ দিন গ্রহণ করলে উপকার পাবে ।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে যষ্টিমধুর  ব্যবহার
যষ্টিমধু আমাদের কোষীয় ও এন্টিবডি নির্ভর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে । ফলে আমাদের দূর্বলতা নিরসনে ও রোগ প্রতিরোধে যষ্টিমধু কার্যকর ভূমিকা পালন করে ।

মূত্র রোধে বা প্রস্রাব আটকে যাওয়ায় যষ্টিমধুর  ব্যবহার
পেট ফাঁপা জনিত কারণে প্রস্রাব তলপেটে জমে আছে কিন্তু বেগ নেই, এক্ষেত্রে ২-৩ গ্রাম পরিমান যষ্টিমধু চূর্ণ ও ৭-৮ টি কিসমিস একসঙ্গে বেটে একটু গরম পানিসহ খেলে তৎক্ষণাৎ প্রস্রাব হবে ।

ফোঁড়ায় যষ্টিমধুর  ব্যবহার
এক্ষেত্রে যষ্টিমধু বেটে প্রলেপ দিলে ফোঁড়া পাকবে ও ফেটে যাবে ।

চোখ ঝাপসায় যষ্টিমধুর  ব্যবহার
চোখে ঝাপসা দেখতে থাকলে শুকনো আমলকী ২-৩ টা ১ গ্রাম পরিমাণ যষ্টিমধুর সাথে নিয়ে একটু থেঁতো করে আধাকাপ গরম পানিতে ৫-৬ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে । তারপর ২-৩ বার ছেঁকে সেই পানি দিয়ে চোখ ধুলে কয়েক দিনের মধ্যে এই সমস্যা কেটে যাবে ।

যষ্টিমধুর অনেক ঔষধি গুণাগুণ রয়েছে। এটি অত্যন্ত উপকারী একটি গাছ। আমাদের সকলেরই উচিত নিয়মমেনে যষ্টিমধু সেবন করা এবং এর সঠিকভাবে ব্যবহার করা।
Share:

No comments:

Post a Comment

Popular Posts

Blog Archive

Powered by Blogger.

Blog Archive

Unordered List

  • Lorem ipsum dolor sit amet, consectetuer adipiscing elit.
  • Aliquam tincidunt mauris eu risus.
  • Vestibulum auctor dapibus neque.

Theme Support

Need our help to upload or customize this blogger template? Contact me with details about the theme customization you need.