শিশুদের দাঁতের যত্ন

শিশুদের দাঁতের যত্ন

মানুষের সারা জীবনে দাঁত দু'বার উঠে। প্রথমত আপনার বাচ্চার ৬ মাস বয়স থেকে ২-২.৫ বছরের মধ্যে যে দাঁতগুলো উঠে সেগুলোকে দুধ দাঁত বলে। উপরের ও নিচের পাটি মিলিয়ে মোট দুধ দাঁতের সংখ্যা থাকে ২০ টি। আর দুধ দাঁত পড়ে গিয়ে আমাদের মুখে যে দাঁতগুলো আসে সেগুলো হল স্থায়ী দাঁত। দুধ দাঁত পড়ে গিয়ে স্থায়ী দাঁত উঠে বলে প্রায়ই আমরা দুধ দাঁত নিয়ে অবহেলা করি, আর ঠিকমত যত্ন নিই না। কিন্তু আমাদের অবশ্যই দুধ দাঁতগুলোর প্রতি যত্নশীল হওয়া প্রয়োজন।

কেননা সুস্থ দাঁত দিয়ে বাচ্চারা তাদের খাবার ঠিকমত চিবিয়ে খাবে যা তার পরিপূর্ণ পুষ্টি বহন করবে। এটা আপনার শিশুর মুখের ভাষা তৈরিতে (Speech Development) সাহায্য করবে এবং স্থায়ী দাঁতের জন্য জায়গা সংরক্ষণ করে পরবর্তীতে একটি সুস্থ সবল স্থায়ী দাঁত উপহার দিবে। সর্বোপরি সুস্থ সবল দাঁত ও সুস্থ সবল হাসি আপনার বাচ্চাকে প্রফুল্ল রাখবে। সুতরাং আমাদেরকে অবশ্যই শিশুদের দুধ দাঁতের প্রতি সঠিক সংরক্ষণ ও যত্ন নিতে হবে।

প্রথমত, শিশুর যখন প্রথম দাঁত উঠে তখন থেকেই তার দাঁত পরিষ্কার শুরু করতে হবে। শিশুর প্রথম দাঁত পরিষ্কার নরম পাতলা কাপড় দিয়ে বা বাচ্চাদের টুথ ব্রাশ (বিভিন্ন বয়সভিত্তিক দাঁতের ব্রাশ বাজারে পাওয়া যায়) দিয়ে দিনে কমপক্ষে একবার (দুইবার করলে ভালো) করতে হবে। রাতে ঘুমানোর আগে দাঁত পরিষ্কার করার অভ্যাসও গড়ে তুলতে হবে।

যখন শিশুর বেশির ভাগ দাঁতই চলে আসবে (২-২.৫ বছর বয়সে) তখন থেকে ব্রাশে সামান্য ফ্লোরাইডযুক্ত টুথপেস্ট নিয়ে ব্রাশ করা শুরু করতে পারে। ফ্লোরাইড দাঁতের ক্ষয় রোধ করতে সাহায্য করে। উন্নত দেশে সাধারণত পানির সাপ্লাইয়ের সাথেই ফ্লোরাইড মিশিয়ে দেয়া হয় কিন্তু আমাদের দেশে এ ধরনের কোন ব্যবস্থা নেই বলে অবশ্যই একজন ভাল ডেন্টিস্টের সাথে পরামর্শ করে ফ্লোরাইডযুক্ত টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করতে হবে।

ফ্লোরাইড টুথপেস্ট খুব সামান্য পরিমাণে ব্যবহার করতে হবে এবং শিশু যেন পেস্ট গিলে না ফেলে এজন্য প্রথম থেকেই তাকে থুথু ফেলে দেয়ার প্রতি উৎসাহিত করতে হবে। ২-৩ বছরের পর থেকে দিনে একবার ফ্লসিং করতে হবে। এতে দুই দাঁতের মাঝখানের ময়লা সহজেই পরিষ্কার হবে যা ব্রাশ দিয়ে পরিষ্কার করা যায় না। ডেন্টাল ফ্লস এক ধরনের সুতা যা দিয়ে দুই দাঁতের মাঝখানটা ভাল করে পরিষ্কার করা যায়।
দাঁতের ক্ষয়রোধের জন্য অবশ্যই শিশুর খাবারের প্রতি নজর দিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যেন শিশুর খাদ্য তালিকায় চিনি জাতীয় খাবার কম থাকে বা চিনি জাতীয় খাবার বেশি খেলে শিশু যেন অবশ্যই সাথে সাথে মুখ কুলকুচি করে ফেলে।

শিশুকে চকোলেট বা ক্যান্ডি থেকে টাটকা শাকসবজি ও ফলমূল খাবার প্রতি উৎসাহিত করে তুলতে হবে। শিশুকে ফিডার বা বোতল ফিডিং করালে দীর্ঘক্ষণ যেন ফিডার (চিনিযুক্ত জুস বা দুধ) শিশুর মুখে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। চিনিযুক্ত জুস বা দুধ খাওয়ার পর তাকে ফিডারে পানি দেয়া যেতে পারে। তাই শিশুকে তার প্রথম দাঁত উঠা শুরু হওয়ার সময় ডেন্টিস্টের কাছে নিতে হবে এবং চেকআপ পরবর্তী উপদেশ মেনে চলতে হবে।

শিশুর দাঁতের মধ্যে যদি কোন গর্ত বা কালো দাগ হয় বা মাড়ি ফুলে যায়, তাহলে শুধু দাঁত ব্রাশ বা ফ্লসিং শিশুর দাঁত ব্যথা কমাতে পারবে না। সেক্ষেত্রে অবশ্যই শিশুকে একজন ডেন্টিস্টের কাছে নিয়ে যেতে হবে। শিশুর যদি বৃদ্ধাঙ্গুলি চুষার অভ্যাস থাকে তাহলে একটা নির্দিষ্ট সময় পর (সাধারণত তার সামনের কর্তন দাঁত ওঠার পর) তাকে অভিজ্ঞ ডেন্টিস্টের কাছে নিয়ে যেতে হবে এবং তার পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক পদ্ধতি শিশুকে আয়ত্ত করাতে হবে। সর্বোপরি সঠিক পদ্ধতি মেনে চলে দাঁত ব্রাশ ও ফ্লস করতে হবে। দীর্ঘ সময় ফিডারে খাবার অভ্যাস বাদ দিতে হবে এবং নিয়মিত ডেন্টাল সার্জন দ্বারা চেকআপ করে শিশুদেরকে দাঁতের মারাত্মক রোগগুলো থেকে রক্ষা করতে হবে।
Share:

No comments:

Post a Comment

Popular Posts

Blog Archive

Powered by Blogger.

Blog Archive

Unordered List

  • Lorem ipsum dolor sit amet, consectetuer adipiscing elit.
  • Aliquam tincidunt mauris eu risus.
  • Vestibulum auctor dapibus neque.

Theme Support

Need our help to upload or customize this blogger template? Contact me with details about the theme customization you need.